স্টাফ রির্পোটার: আমদানী দেনা পরিশোধের জন্য ডলার প্রতি ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হলেও ব্যাংক গুলো ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি বা অন্য যেকোন আমদানির দায় পরিশোধের জন্য ১০৫ থেকে ১০৬ টাকা আদায় করছে। অথচ, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রপ্তানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা পাচ্ছে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা। অর্থাৎ ডলারের ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয়ের মূল্য প্রায় ৭ টাকা কম পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
তৈরি পোশাক শিল্পের শীর্ষ বিকেএমইএ‘র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য কোন ভাবেই ১ টাকার বেশি পার্থক্য হওয়া উচিৎ না।
২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তান্তি খাত থেকে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ৮২ শাতংশ এসেছে তৈরী পোশাক শিল্প রপ্তানির মাধ্যমে। কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও পোশাক শিল্পের এই অর্জন দেশের রপ্তানিখাতকে গতিশীল রেখেছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রেখেছে নীট পোশাক খাত। কিন্তু তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামাল এবং ডাইং এ ব্যবহৃত রং কেমিকেল এর জন্য ব্যবসায়ীদের আমদানী করতে হয়। আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম, পরিবহন খরচ ও শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিযোগীতা মূলক বাজারে পণ্য রপ্তানি করে কাঙ্খিত মুনাফা অর্জন করা অত্যান্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই সাথে বর্তমান পরিস্থিতিতে ডলারের মূল্যে আমদানী দেনা পরিশোধে এবং রপ্তানি আয় নগদায়নের ব্যবধানের কারণে উদ্যোক্তারা বিশাল ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ হাতেম ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণারকে লিখিত ভাবে জানান, কনভার্সের এই নীতিগত প্রক্রিয়াতেই আমরা বিশাল অঙ্কের একটি ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছি। ফলশ্রুতিতে দেখা যাবে বছর শেষে একটি বড় ধরণের শর্টফর তৈরী হবে যা ব্যবসায়ীদের পক্ষে কোন ভাবেই সমন্বয় করা সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোকে পূর্বের ন্যায় ইডিএফ এর মাধ্যমে ব্যাক টু ব্যাক এলসি এর দেনা পরিশোধ সমন্বয় করতে নির্দেশনা প্রদান করতে পারে। ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন ও ব্যাফেদার পাশাপাশি রপ্তানিখাতের বৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে বিকেএমইএ এবং বিজিএমইএ‘র মতামতকে যথার্থ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা এবং ডলারের মূল্য নির্ধারণের এখতিয়ার থাকবে শুধু সরকারের তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের।
মোহাম্মদ হাতেম জানান, দেশের নিজার্ভ বৃদ্ধিতে রেমিটেন্স প্রবাহ ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় সমান ভাবে অবদান রাখে। কিন্তু সম্প্রতি ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন ও বাফেদা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে রেমিটেন্স ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের পৃথক মূল্য বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়েছে। রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার হয় ১০৮ টাকা। সাথে ২.৫ শাতংশ ইনসেনটিভসহ মোট ১১০ টাকা ৭০ পয়সা দাঁড়ায়। কিন্তু রপ্তানিকারকেরা সর্বোচ্চ বিনিময় হার পান ৯৯ টাকা। অর্থাৎ প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৭০ পয়সা। এ ধরণের বৈষম্যমূলক বিনিময় হার কোন ভাবেই গ্রহণ যোগ্য না। রেমিটেন্স ও রপ্তানী আয় ডলারের বিনিময় মূল্যেও একই হওয়া উচিৎ।